আকরাম উদ্দিন,সুনামগঞ্জঃ-
দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের খাসিয়ামারা নদীতে সেতু না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ৫০ হাজার মানুষ। রশি দিয়ে টেনে খেয়ানৌকা চালান এই এলাকার বাসিন্দারা। সভ্যতার অগ্রগতির এই সময়েও পুরোনো দিনের যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে সীমান্তবর্তী এলাকার টেংরাটিলা-আলীপুর এলাকার মানুষের। ৫০ বছরেরও অধিক সময় থেকে রশির টানে খেয়া চলছে এই নদীতে।স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, শীঘ্রই ওখানে সেতুর কাজ শুরু হবে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের একপাড়ে আলীপুর বাজার, অপর পাড়ে টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ডসহ টেংরাটিলা বাজার। মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে সীমান্তের ওপার (ভারতের মেঘালয় থেকে) থেকে নেমে আসা পাহাড়ী নদী। বর্ষায় পাহাড়ী ঢল নামলে প্রবল স্রোতে কারণে খেয়া নৌকা বন্ধ থাকে। খেয়া নৌকা চালানোর জন্য খাসিয়ামারা নদীর দুইপাড়ে রশি টানানো হয়েছে। পাহাড়ী নদীতে স্রোতেথাকলে রশি ব্যবহার করা ছাড়া উপায় থাকে না। ইঞ্জিন চালিত নৌকা হলে খরচ বেশি যাবে, স্রোতে উজানে ইঞ্জিন চালিত নৌকাও চালানো কষ্ট হয়, হাতে বাওয়া নৌকা হলে স্রোতে ভেসে যাবে নৌকা। প্র্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচলকালী এলাকাবাসী দ্রুত এই নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবি জানান।
দোয়ারা উপজেলার সুরমা ও লক্ষীপুর ইউনিয়নের টেংরাটিলা, আলীপুর, আজবপুর, গিরিসনগর, পশ্চিম টিলাগাঁও, নূরপুর, সোনাপুর, নন্দীগ্রাম, সুলতানপুর, বড়কাটা, বৈঠাখাই, হাছনবাহার, এরুয়াখাই, রসরাই, নুরপুর, সোনাপুরসহ এলাকার অন্তত ৩০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীদের খাসিয়মারা নদী পারাপারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিকল্প চলাচলের কোনো সুযোগ না থাকায় রোগী ও বয়স্কদের নিয়েও খাসিয়ামারা নদী ঝুঁকি নিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন মানুষজন।
খেয়া নৌকার মাঝি মুজিবুর রহমান জানান, ১০ বছর ধরে খাসিয়ামারা নদীতে খেয়া নৌকা চালিয়ে আসছি। বর্ষায় স্রোতে প্রবলতায় নৌকা টিকিয়ে রাখা যায় না। রশি দিয়েও আটকানো মুশকিল হয়। প্রবল স্রোতে রশি ছিঁড়ে নৌকা নিয়ে যায় অনেক দুরে। নৌকা ডুবির ঘটনাও ঘটেছে। সেতু হলে এমন হতো না।
আলীপুর গ্রামের কামাল মিয়া বললেন, বহুদিন হয় এখানে সেতু হবে, হচ্ছে শুনছি, কিন্তু আমাদের কষ্ট দূর হচ্ছে না।
একই গ্রামের বাসিন্দা ইসহাক মিয়া বললেন, জীবন বাজি রেখে খাসিয়ামারা নদী পারাপার হতে হয়। সেতু নির্মাণ ছাড়া এই দুর্ভোগের অবসান হবে না।
জাহার মিয়া বললেন, রাতের বেলায় রোগী নিয়ে আসা-যাওয়া করতে মহা বিপদে পড়তে হয়। জটিল রোগী হলে কষ্টের শেষ থাকে না।
রমজান আলী বলেন, খাসিয়ামারা নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই থমকে আছে এই সেতুর জন্য।
আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বললেন, সেতু নির্মাণ হলে ৩০ গ্রামের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের মৎস্য খামারি আব্দুর রহিম বললেন, সেতু না থাকায় মাছ বিক্রি করতেও সমস্যা হয়, পিকআপ বা ট্রাক খামারের কাছাকাছি না আসায় খামারে চাষ করা মাছের উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যায় না।
নূূরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহম্মদ মশিউর রহমান বলেন, আমার বিদ্যালয় ছাড়াও একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা খাসিয়ামারা নদী পার হয়ে আসা-যাওয়া করেন। সকল শ্রেণি পেশার মানুষের চলাচল নিরাপদ করতে খাসিয়ামারা নদীর উপর সেতু নির্মাণ জরুরি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বললেন,খাসিয়ামারা নদীর আলীপুর এলাকায় সেতু নির্মাণের দাবি বহুদিনের। ৪ কোটি ২৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এই সেতুর জন্য ইতিমধ্যে বরাদ্দ হয়েছে। দরপত্রের মূল্যায়ন চলছে। এই কাজ শেষ হলেই পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করে দ্রুতই এখানে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।
কমেন্ট করুন