২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সংবাদ শিরোনামঃ
সুনামগঞ্জ বিজিবির অভিযানে দেড় কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য আটক সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ নিয়ে অনৈতিক অভিযোগের কারণে  স্থগিত পিআইসি গঠন কার্যক্রম।  বিশ্বম্ভরপুরে উপজেলা যুব ফোরামের র‍্যালী ও মানববন্ধন বিশ্বম্ভরপুরে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিশ্বম্ভরপুরে আন্তর্জাতিক দূর্নীতি বিরোধী দিবস ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশ্বম্ভরপুরে জলবায়ু পরিবর্তন ও জেন্ডার বিষয়ক প্রশিক্ষণ সুনামগঞ্জে গানে গানে বাউল কামালের ১২৩ তম জন্মবার্ষিকী পালিত আগ্নেয়াস্ত্র সহ তাহিরপুর সীমান্তে ৩ যুবক আটক সুনামগঞ্জে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৭২ তরুণ-তরুণী  হাওরে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল জব্দ , ৫ জেলে আটক সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানা পুলিশের উদ্যোগে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত বিশ্বম্ভরপুরে মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা বিচারের নামে অবিচার হয়, নারী কোথাও নিরাপদ নয়” শরীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস-২০২৪ অনুষ্ঠিত তাহিরপুরের পাতারগাঁও অবৈধ বাঁধ দিয়ে পানি আটকিয়ে চাদাঁ নেয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন তাহিরপুরে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা টাংগুয়ার হাওরকে নষ্ট করা যাবে না,অপরিকল্পিত ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও করা যাবে না—-পানি সম্পদ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান তাহিরপুর হাওরাঞ্চলে অন্তর্বর্তীকালীন সময় সরকারের দুই উপদেষ্টা তাহিরপুর সদরে পল্লী বিদ্যুৎ সাবস্টেশন স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন
সোনালী অতীত, পর্ব-৩

সোনালী অতীত, পর্ব-৩

আমাকে খোঁজো না তুমি বহুদিন
কতদিন আমিও তোমাকে
খুজি নাকো,
এক নক্ষত্রের নিচে তবু
একই আলো পৃথিবীর পারে,
(জীবনানন্দ দাশ)

শাহ জাহান আহমেদ,মাল্টা থেকে।
আমদের গ্রামের পশ্চিমে ছিল ডীব চর (চর কি না কেউ মন্তব্য করলে ভাল হয়),কারন ডীবচর মানুষের লোভের কারনে আজ ইতিহাস হয়ে গেছে।তখন আমি প্রাইমারি স্কুলে ছাত্র,ভোটমিয়া ও নানু ছিল ছোট বেলার খুব বেশী খেলার সাথী।
ডীব ছিল আমার ভয় ও রহস্যময় জায়গা। কারন ডিবের পশ্চিমে ছিল জাদুকাটা নদী ও বারিক টিলা, দক্ষিণে ছিল জাদুকাটা নদীও বড় টেক,উত্তরে খাসিয়া পাহাড়।নদীর মধ্যে একটা টেক ছিল,যা মাঝের টেক নামে পরিচিত।গ্রাম হতে ডীবে যেতে হলে খেলার মাঠ পার হয়ে যেতে হয়।ডীবের সর্ব দক্ষিণে,আমাদের জমির সাথে কবরস্থান ।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ইপিআরের পান্জাবী হাবিলদার গোলামবীরকে মেরে সেই কবরস্থানে পুঁতে রাখে,অন্য একজন নায়েক পান্জাবি ছিল থাকে নদীর কোন এক পারে পুঁতে ফেলে।কবরস্হানের সাথে বড়ডোবা ছিল সেটা নাকি দোষী। বড়বড় শিমুল গাছ এখন আর সেই রকম শিমুল গাছ চোখে পড়েনা।
আসলে আমাদের এলাকাটি খুবই রুক্ষ,শীতে প্রচন্ড শীত ও শুষ্ক,আবার গরমে প্রচন্ড গরমও সেতসেত ভাব,এখন আবার নতুন সমস্যা বজ্রপাত ।
কিন্তু ভাদ্র,আশ্বিন ও কার্তিক এই মাসগুলোর সময়টা চমৎকার ।বাংলা মাসের নামের কথা আসতেই মনে পরে গেল আমাদের বাংলা মাসের নাম গুলো কিন্তু হিন্দু দেবতাদের নামে। কোন ইসলামী দল আবার ভবিষ্যতে দাবী তুলবে নামগুলি বদলানোর জন্য,তদ্রূরুপ সৌর জগতের গ্রহ গুলির দেবতাদের নামে !
ডীবের পশ্চিমে নদীর পাড়ে বিরাট জঙ্গল ছিল,যা নদীর পাড়কে সুরক্ষা দিত । নদীর পাড়ে এক জাতের কাটা জাতীয় ঝোপ ছিল, নাম ছিল কুছাই ঝোপ,প্রচুর ছোট কাটা ছিল সমস্ত ঝোপে । মোট কথা নদীর পাড় জংগল ও ঝোপ দারা প্রাকৃতিক ভাবে সুরক্ষিত ছিল ।
আবার ডিবের পূর্ব দিকে সম্পন্ন অংশ আখ ক্ষেত । পুরো সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যে এটাই ছিল সর্ব বৃহত্তম আখের অঞ্চল ।অনেকে সময় স্থানীয় মানুষও আখ ক্ষেতে ঢুকলে পথ হারিয়ে ফেলত,যাকে বলে কানাউল্লা (স্হানীয় ভাষায়)।
মাঝে মাঝে আমরা খরগোশ শিকারে যেতাম ।
নদীর পাড়ে যে অংশে কম জঙ্গল অথ্যাৎ বড় গাছ নাই যেখানে, আমরা একদিকে ঝাল পেতে দিতাম আর অন্যদিকে থেকে সবাই মিলে লাঠি দিয়ে বনে ঝোপ ঝাড়ে আঘাত করে হৈ হৈ করে দৌর দিতাম ,যদি জংলী খরগোস থাকে তবে জালের মধ্যে আটকা পরে যেত। এই শিকার আমাদের জন্যে খুবই আনন্দের ছিল, যদিও ছাগল পা খরগোশ না বিড়াল পা তা নিয়ে শেষে আর খাওয়া সম্ভব ছিল না ।
কুছাই ঝোপ বহু জায়গা নিয়া থাকে,এক দেড় কেয়ার জায়গা অনেক সময় প্রয়োজন হয়।শুনেছি বাঘ ও এই ঝোপকে খুবই পছন্দ করে।এগুলো ছিল নদীর পাড় রক্ষার প্রথম শ্রেনীর রক্ষক।জমি বাড়ানোর জন্য এই জংগলও এই ঝোপ গুলি কৃষকেরা আস্তে আস্তে কাটা শুরু করে দেয় ,সেদিন থেকে ডিব চরের মৃতৄ ঘন্টা বাজতে শুরু করে।তৎকালীন সময় আখের চাষ খুবই লাভজনক ছিল,এর ফলে লাউড়ের গড় গ্রামের মানুষ আস্তে আস্তে ধনী হয়ে উঠে।
রাখালরা দল বেধে গরু চড়াত এইসব জায়গায় ,এমনকি এদের মধ্যে সর্দারও ছিল । বরই গাছের কোন অভাব ছিল না এবং ছোট বড় কত নাম না জানা গাছ। ঐ গাছ গুলোর মধ্যে প্রায়ই মৌমাছির চাক পাওয়া যেত। একবার হল কি আমি, ভোট মিয়া,এমদাদ, আলী ফরিদ ,নানু ও আজিম গেছি মৌচাক ভাঙতে ।ভোট মিয়া আগুন ও দুয়া দিয়ে মৌমাছি তাড়াবে এবং মধুর চাক কাটবে ,কিন্তু একজন বাউল(তাগাড়া) ধরতে হবে,প্রশ্ন হল কে ধরবে? ঐ সময় একটা কথা চালু ছিল নাপাক শরীরে মৌমাছ কামড়ায়। সবাই না,কারন নাপাক প্রস্রাব করে পানি নেইনি,তাই এখন সমাধান কি ? তখন আমাদের সাহসী যোদ্ধা আজিম এগিয়ে আসে এবং বলে পাক/নাপাক যাই থাকি আমি তাগারা ধরব। সমাধান হয়ে গেল ,আমরাও প্রচুর মধু পেলাম। প্রথমে মোমের চাক চিবিয়ে খাওয়া পরে ডাইরেক্ট মধু,একটু পরে বুঝলাম সারা পৃথিবী ঘুরতেছে এবং প্রচন্ড নেশা।
ডীবের পশ্চিমে বাংলাদেশের ও ভারত মিলিয়ে বালুর চর ,বর্তমানের মত বড় ছিল না। কিন্তু নীরব নিস্তব্ধ ছিল ,শীতকালে প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসত। পূর্বে এত বালি ছিল না, কারন বর্তমানে মেঘালয়ে প্রচুর কয়লা ও চুনার পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে প্রচুর পরিমানে পাহাড়ের মাটি কাটা লাগে।ঐ মাটি বৃষ্টির পানি ধুয়ে বালি ওজনে ভারি হওয়ায় থেকে যায় আমাদের এলাকায়, মাটি পানির সাথে মিশে ভাটি অঞ্চলে চলে যায় পলি মাটি হয়ে নদী,খাল ও হাওরে দিন দিনে ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
আমরা মাঝে মাঝে সুবং (ছোট ছোট টক মিষ্টি ফল) খাওয়ার জন্য দল বেধে যেতাম। আরেকটা ফল ছিল আয়লা ছোট ছোট গুচ্ছ আকারে থাকে ,একটা গাছ ছিল জহুর ভাইদের ক্ষেতে। কত ভাবে গাছে চড়ে খেয়েছি তার হিসাব নাই। আমাদের গ্রামের প্রত্যেক জায়গায় ছোট ছোট জংগল ছিল ,এই জায়গায় গুলোতে ডালবিহীন গাছ লম্বা পাতা ও সাথে গুচ্ছ গুচ্ছ লাল ফুল ফুটত,এই গাছের নাম মধুগাছ ।আমরা ফুল উঠিয়ে এনে চুষে মধু খাওয়া হত।
এক সময় আমাদের এলাকায় কোন আখ ক্ষেত ছিল না, আমার চাচার এক ধর্ম ছেলে ছিল কঠু মিয়া ওরফে সমশের আলী,অসম্ভব পরিশ্রমি ছিলেন । তিনি কিশোরগঞ্জ এলাকা থেকে চারা এনে এই দেশে আখের প্রচলন করেন। আখের জন্য গেলে আখ দিতেন সাথে কয়টা চারা দিয়ে দিতেন,বাড়ীতে লাগানোর জন্য,এই কথাটি মানুষের মুখে মুখে ফিরত এবং তিনি এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন।তিনিই ছিলে অত্র এলাকার আখের চাষের জনক।
ক্রমশ–

শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন





পুরাতন খবর খুঁজুন

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১