শাহ জাহান আহমেদ (মাল্টা)
আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি আমিআমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি। আমি শ্রমজীবী মানুষের উদ্বেল অভিযাত্রার কথা বলছিআদিবাস অরণ্যের অনার্য সংহতির কথা বলছি (আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ)
আমি আমার পুর্ব পুরুষের কথা দিয়ে শুরু করি,কিন্তু চলে যাই অন্য প্রসঙ্গে।মো:লেবাই ছিলেন আমার বংশের প্রথম মুসলিম পুরুষ।
মো: লেবাই
জমির মোড়ল
হাজী সাহেদ আলী,গোলাম মোস্তফা-গোলাম কিবরিয়া।
আমার পিতা মরহুম গোলাম কিবরিয়া। আমি পঞ্চম প্রজন্ম।এখানেও আমার প্রশ্ন কে বা কাহারা প্রথম অত্র এলাকায় ধর্ম প্রচার করেছিলেন? তা জানার চেষ্টা করি,শাহ আরফিন (র:)শাহজালাল (র:)সাথী ছিলেন। কিন্তু তিনি কত সালে অত্র এলাকায় আসেন আমি চেষ্টা করেছি জানার কিন্তু আসা যাওয়া ও কতদিন অবস্হান করেছিলেন তার কোন সঠিক উত্তর পাই নাই।আবার লাউড় রাজ্যের রাজধানী ছিল নবগ্রাম,ঐ রাজধানী নদীগর্ভে কত সালে বিলীন হয়ে যায় তা জানতে এবং তাদের বংশধর কোথায় আছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করব।
এতটুকু জানি অদ্বৈত্য মহা প্রভুর (১৪৩৪-১৫৫৮) তার পরও ইতিহাস থেকে যতটুকু পারি তুলে ধরতে চেষ্টা করব। মহাভারতের বাংলা অনুবাদকারী মহাকবি সঞ্জয়ের নিবাসও এই এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেন।
রাঢ় শব্দ থেকেই লাউড় শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়।সুতরাং খুব নিকটের তথ্য হাতে নেওয়া সুযোগ নাই,শাহ আরফিন( র:) যখন আসেন তখন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বর্তমানে ভারতের মেঘালয়ের মোকাম পাড়া কিছুদিন অবস্হান করেন। তিনি ঐ সময় ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন ও বেশ কিছু মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
হজরত শাহজালাল (র:)১৩০৩ সালে সিলেটে আসেন। শাহ আরপিন (রঃ) সাথী ছিলেন,১৩০৩ সালের পর হয়ত কোন এক সময় তিনি এই অঞ্চলে আসেন। কিন্তু কারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এ ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। তবে বুঝা যায় সাড়ে ছয়শত বৎসর পূর্বে থেকে অত্র এলাকায় ইসলাম প্রচার শুরু হয়।আবার আসতেছি লাউর রাজ্যের রাজাদের ইতিহাসে, এরাও নিজেদের মধ্যে কলহে জড়িয়ে স্বাধীনতা হারায় ।সম্ভবত ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে লাউড় রাজ্য স্বাধীনতা হারায় এবং মোগলরা এর নিয়ন্ত্রক হন। গোবিন্দ সিংহ তার জ্ঞাতি ভ্রাতা জগন্নাথপুরের রাজা বিজয় সিংহের সাথে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিরোধে লিপ্ত হয়েছিলেন। বিজয় সিংহ গুপ্ত ঘাতকের হাতে নিহত হন। বিজয় সিংহের বংশধররা এ হত্যার জন্য গোবিন্দ সিংহকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে সম্রাট আকবরের রাজদরবারে বিচার প্রার্থনা করেন।এ ঘটনার বিচার করতে সম্রাট আকবর দিল্লি থেকে সৈন্য পাঠিয়ে গোবিন্দ সিংহকে দিল্লির রাজদরবারে ডেকে নেন। বিচারে গোবিন্দ সিংহের ফাঁসির হুকুম হয়।গোবিন্দ সিংহের অন্য নাম ছিল জয় সিংহ। একই সময়ে জয় সিংহ নামের অন্য একজনও রাজা গোবিন্দ সিংহের সঙ্গে সম্রাট আকবরের কারাগারে আটক ছিলেন। ভুলবশত প্রহরীরা গোবিন্দ সিংহের পরিবর্তে ওই জয় সিংহকে ফাঁসিতে ঝুলান। গোবিন্দ সিংহের প্রাণ এভাবে রক্ষা পাওয়ায় তিনি কৌশলে সম্রাট আকবরের কাছ থেকে নানা সুযোগ গ্রহণ করেন। তিনি সম্রাট আকবরের কাছে প্রাণভিক্ষা চান ও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। গোবিন্দ সিংহের নাম হয় হাবিব খাঁ। সম্রাট আকবর গোবিন্দ সিংহকে তার হৃতরাজ্য ফের দান করেন।
ইতিহাসে কোন উল্লেখ নাই নবগ্রাম কত সালে নদী ভাংগনে কবলে পরে বা কত দিন নবগ্রাম রাজধানী ছিল । হয়ত বা নদী ভাংগনের অবস্হা দেখে নতুন রাজধানী স্থাপনের কাজ শুরু করেদেন হলহলিয়া গ্রামে,কত সালে স্থাপিত উহা ইতিহাসে উল্লেখ নাই। এলাকার পূর্বে কি নাম কি ছিল জানিনা তবে হাওলী বা হাবেলি থেকে কালক্রমে হলহলিয়া হয়।
ঐ সময় লাউড়ের হাউলী বা হাবেলী নামে পরিচিত ছিল। হাবিব খা প্রথম মুসলিম রাজা এই লাউড় রাজ্যের। তবে এই বংশেরই উমেদ রাজা লাউড়ে দূর্গ নির্মাণ করেছিলেন।
প্রাচীন নানা গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, হাবিব খাঁ’র পৌত্র ছিলেন মজলিস আলম খাঁ। মজলিস আলম খাঁ’র পুত্র ছিলেন আনোয়ার খাঁ। তিনি খাসিয়াদের উৎপাতে সপরিবারে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের লাউড় ছেড়ে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে চলে যান।
এই ইতিহাস জানানোর কথা ছিল মক্তবুর রহমান মুক্ত,কারন তার বাড়ী ঘাগটিয়া গ্রামে। কিন্তু কেন যেন আমার লিখতে হচ্ছে।সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে ইতিহাসে অনার্স ও মাস্টার্স,সে আবার এমবিএ করে এখন চলে গেছে প্রযুক্তির ব্যবসায়। সে কয়েক বার ইট নিয়ে গেছে ঢাকায়,কিন্তু নবগ্রামের ইতিহাস জানতে গিয়ে এই ইট নিজেই আবার ইতিহাস হয়ে গেছে।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণে আমার পূর্ব পুরুষের ব্যাপারে লেখা।হয়ত আমার আসে পাশে গ্রামের মানুষ সমসাময়িক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এখানে শুরু হয় অন্য ইতিহাস ! যেমন হিন্দুরা বলে জল,মুসলমানরা বলে পানি ,আবার মুসলিম বলে গোসল,হিন্দুরা বলে স্নান,কিন্তু উভয়ই বাঙালি এক জায়গা থেকে আসা।
কৃতজ্ঞতা:ড.আতাউর রহমান,গবেষক ও প্রত্নতাত্ত্বিক।
ক্রমশ!…………
কমেন্ট করুন