শাহ জাহান আহমেদ (মাল্টা থেকে)
হাজার বছর ধ’রে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
(জীবনানন্দ দাশ)
বারিক টিলার পূর্ব নাম ছিল বড়গোপ টিলা। এখানে আব্দুল বারিক নামের একজন লোক ছিলেন। আধ্যাত্মিক লাইনের ,ফকিরী ও গান বাজনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন ও এই টিলাতে বহুদিন বসবাসের কারনে সবার কাছে এক নামে পরিচিত ছিলেন, এতেই নাম হয় বারিক টিলা।
এই ভাবে চান মিয়া নামে একজন লোক ছিল গাজা আসক্ত ছিল ,এই ঘাটে তার ছোট্ট একটি ঘর ছিল । মুলত;সে ছিল বিজিবির মাঝি এবং এদিকে যত লোক আসত নদী পারাপারের একমাত্র চান মিয়াই ছিল ভরসা যা বর্তমানে বিখ্যাত চান মিয়ার ঘাট নামে পরিচিত ।
টিলার নদীর পাড়ে ভারত বাংলাদেশ সীমানার কাছে একটি বিরাট বটগাছ ছিল। গাছটির বয়স কত তা আমদের অনুমানের বাহিরে এবং গাছটির কাছে বাঘের গাত (স্থানীয় ভাষা) নামে খাড়া ও গভীর পানিতে গর্তের মত ছিল । ঐখানে প্রচুর মাছও বড় বড় পাহাড়ি ভেসে আসা গাছ পাওয়া যেত ,যা বর্তমানে কিছুই নাই। মানুষের বিশ্বাস ছিলে কেউ যদি ঐ বট গাছের ডাল কাটে তবে সে মারা যাবে।
তখনকার দিনে মানুষের বর্ষাকালে একটা পেশা ছিল নদীর মধ্যে গাছ ও লাকরী ওঠানো সেই সাথে,প্রচুর গাছ পাওয়া যেত ,যা টাকা কামানোর সুযোগ ছিল।
পাহাড়ে বৃষ্টি হয় বর্ষাকালে,এই বৃষ্টির পানি পাহাড় থেকে দ্রুত নেম আসে নিচের নদীতে শতশত ঝরনার মাধ্যমে ,সাথে আসে গাছ ,বালু ,পাথর ও কয়লা। পানি এত দ্রুত নেমে আসে যে অনেক সময় গ্রামের মানুষ ঘাটের নৌকা সঠিক জায়গায় নেওয়ার সুযোগ পায়না।বর্তমানে এলাকায় জীবিকার এক মাত্র পথ বালু ও পাথর উত্তোলন ।কিছু মানুষ মাছ ধরার কাজে জড়িত ছিল,ভাদ্র /আশ্বিন মাসে প্রচুর মাছ উজানে যায় (প্রাকৃতিক ভাবে মাছের যে জায়গায় জন্ম, সেই জায়গায় ফেরত আসে)ডিসকভারি চ্যানেলের স্যামন মাছের মত,কিংবা ইলিশ মাছের মত ডিম পারার সময় নদীতে আসে, আবার ডিম পারা শেষ ফেরত যায় সমুদ্রে ।
বারেক টিলার বট গাছের নিকট নদীর গভীর পানিতে বড় বড় আইড় মাছ(ঘাগট মাছ)পাওয়া যেত, তিনটা বরশি একসাথে করে আইড় মাছের বসবাসের জায়গায় পাতা হত, মাছ তার বাসা তৈরি করতে গিয়ে পেট দিয়ে বালি সরাতে থাকে,কোন এক সময় বরশি
পেটে লেগে মাছ আটকে যায়।মাছ গুলো ছিল দেখার মত ও সুস্বাদু ,এই মাছ এখন বিলুপ্ত নদীতে।
এক সময় বারিক টিলাতে প্রচুর আনারস ও গাছ আলুর বাগান ছিল। ঐখানে মেরিনা দি’র মা ছুরানী মইর বিরাট আনারসের বাগানের সাথে আম এবং কাঁঠালের গাছ ছিল। আশে পাশে ছিল আরও আদিবাসীদের গাছ আলুর বাগান । গাছ আলু সম্ভবত পৃথিবীর সব জায়গায় কম বেশী হয়। আমি জাপানে দেখেছি গাছ আলু থেকে এক জাতের ওয়াইন তৈরি হয় , গ্লাসে প্লাস্টিকের ঢাকনা থাকে, যা খুবই হার্ড ড্রিংক হিসাবে বিবেচিত। ইউরোপে আসে এই গাছ আলু আফ্রিকা থেকে, যা সিদ্ধ দিয়ে খায় বিশেষ করে আফ্রিকানরা । মেঘালয়ে গাছ আলু থেকে পাউডার তৈরি করে রুটি হিসাবে খায়।
তৎকালীন সময় ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে প্রচুর শুয়োর আসত । এখন কাঁটাতারের বেড়ার ফলে মনে হয় আসতে পারে না। আন্দ্রিয়দার সাথে রাজাই থেকে টাকেরঘাট পর্যন্ত অনেকবার শিকারে গেছি,সাধারণত রাত যখন গভীর হয় ,তখন পাহাড় থেকে নেমে আসে শুয়োর । কখনও কখনও শুয়োর বা খরগোশ শিকার করতে পেরেছি ,কিন্ত সব সময় নয়। সাধারণত পাহাড়ের নিচে মাটিতে লবন জাতীয় কিছু আছে তা শুয়োরের প্রিয় এবং তখন আবার পাকা ধানেরও সময়,এই দুই কারনে পাহাড় থেকে নেমে আসে। শুয়োর শিকার করা আবার রিস্কি, আহত শুয়োর বাঘের চেয়ে ভয়ংকর ।
বারিক টিলার পাড়ে এক প্রকার মাটি পাওয়া যেত ,উহা সিকর মাটি হিসাবে পরিচিত। ছোট ছোট পিছ করে রোদে শুকিয়ে ও আগুনে পুড়ে সিকর হিসাবে বিক্রি হত। শুনছি গর্ভবতী মহিলাদের নাকি খুবই প্রিয়। ঐ মাটির স্বাদ, টক টক ও একটা অন্য রকম গন্ধ ছিলl এক বার এক মহিলার উপর সিকরের গর্ত ভেংগে পরে , ঐ মহিলাটি মারা যায়।ঐ মহিলা আমার পরিচিত ছিলেন।
ক্রমশ————
ছবি কৃতজ্ঞতা solaiman khan
কমেন্ট করুন