জেলা প্রতিনিধি সুনামগঞ্জঃ- পাহাড়ি ঢলে সীমান্তের ওপার থেকে মেঘালয়ের বুক চিরে নেমে আসা বালির কারণে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দুই গ্রামের ২ শতাধিক পরিবারের জীবন জীবিকা নিয়ে মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৭ সালে এভাবে একবার ঢল আসে। ঢলের সাথে আসা পাথর ও বালুতে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি এবং রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবারও এক সপ্তাহ আগে একইভাবে পাহাড়ি ঢল নামে। একই সাথে বালু পাথর এসেছে। একারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গত বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গেলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, কয়েক বছর আগেও ভারতে পাহাড় ধসে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের চাঁনপুর ও রজনী লাইন গ্রামে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছিল। উভয় গ্রামের প্রায় আড়াই হাজার পরিবারের বসবাস রয়েছে। ঢলে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, বাদাঘাট-ট্যাকেরঘাট সড়ক ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
চাঁনপুর গ্রামের সাদেক মিয়া বলেন, এই দুই গ্রাম ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি। ১৪ বছর আগেও পাহাড় ধসের ঘটনায় স্থানীয়দের অনেক ক্ষতি হয়েছিল। এবারের ধসের ঘটনায় আবারও বসতভিটা, ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এ ঘটনায় জমিতে বালু পড়ে ক্ষতি হয়েছে তৌফিক মিয়ার ২ কেয়ার ফসলি জমি ও বাড়ি, আসক মিয়ার মুদিমালের দোকান ঘর ও মালামাল, সাদেক মিয়ার ৮ কেয়ার ফসলি জমি, জয়নাল মিয়ার ১০ কেয়ার ফসলি জমি, সিরাজ মিয়ার ৫ কেয়ার, জৈন উদ্দিনের ৫ কেয়ার, নিজাম উদ্দিনের ১০ কেয়ার ফসলি জমি, রাসেল মিয়ার বসতবাড়ি, রফিকুল মিয়া ও আব্দুল আলীর বসতবাড়ি, জৈনুদ্দিনের ও আফর উদ্দিনের বসতবাড়ি, মিনারা বেগমের বসতবাড়ি, নুরুল ইসলামের বসতবাড়ি, মানিক মিয়া ও অঞ্জনা বেগমের বসতবাড়ি, নজরুল ইসলামের বসতবাড়ি, রহিম মিয়া ও আলকাছ মিয়ার বসত বাড়ি, ফায়েজ মিয়ার বসতবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় ঢলের পানিতে আসা বালু পাথরে।
রজনী লাইন গ্রামের আব্দুর রহিমের বসতবাড়ি, নুর মিয়া ও শফিকুল ইসলামের বসতবাড়ি, শামছুদ্দিনের বসত বাড়ি, রুকন উদ্দিনের ও ইছব আলীসহ রজনী লাইন গ্রামের আরও অন্তত ৩০টি ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় ঢলের সাথে আসা বালু পাথরে। এ ছাড়াও ইয়াছিন মিয়ার পুকুরের মাছ ভেসে যায় ঢলের পানিতে।
ক্ষতিগ্রস্ত ফায়াজ মিয়ার স্ত্রী ফৌজিয়া বেগম বলেন, গত ১৬ আগস্ট তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের খাসিয়া পাহাড় ধসে গিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশে ঢলের পানি প্রবেশ করে। এতে আমার বসতবাড়ি নিমিষেই তলিয়ে যায়। ঢলের পানি ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। আমি তিন সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে বসবাস করছি।
ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্জনা বেগম বলেন, ঢলের পানির প্রবল বেগে বালু পাথরও আসতে থাকে। এক ধাক্কায় আমার ঘর ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ঢল নামা শুরু হলে আমি দ্রুত সন্তানদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। গাছে আঁকড়ে ধরে কোনো মতে প্রাণ বাঁচাই। আমার স্বামী নেই। আমি অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছি।আদিবাসী নেতা এন্ড্রু সলমার বলেন পানি নিষ্কাশনের স্টিক ব্যবস্থা বা থাকায় ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের সৃষ্ট জলধারায় বালি পাথরে স্তুপে কৃষকের ফসলি ভুমিকা মরুভূমির রুপ নিয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রায়হান কবির বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় চানপুর ও রজনী লাইন গ্রাম। ওই স্থানের একটি ছড়া দিয়ে পানি আসে এবং বর্ষায় ঢল নামে। সম্প্রতি ঢলের সাথে বালু আসায় এলাকার বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঢলে তাৎক্ষণিকভাবে মানুষের ঘরবাড়ি ও জায়গা জমির বেশ ক্ষতি হয়েছে। মানুষের বাড়ি-ঘর রক্ষায় উপজেলার পক্ষ থেকে ২ হাজার বালুর বস্তা দেয়া হয়েছে। এই বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানানো হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ভারতে পাহাড় ধসে যাওয়ার বিষয়টি এ দেশের মানবিক বিপর্যয়। পরিবেশেরও মারাত্মক বিপর্যয়। এই ঘটনায় চাঁনপুর ও রজনী লাইন গ্রামের রাস্তা-ঘাট, বসতবাড়ি, ফসলি জমির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। আমি এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং ঘরবাড়ি রক্ষায় বালুর বস্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা ঢলে আমাদের দেশের তিনটি গ্রাম ও জমিজমার ক্ষতি হয়েছে। আমরা ওখানকার বালু অপসারণ করে নিলামে বিক্রি করার চিন্তা করছি এবং মানুষের ফসলি জমিকে একই সঙ্গে চাষাবাদের উপযোগি করে দেবারও চিন্তা করা হচ্ছে।
কমেন্ট করুন