কামাল হোসেন,তাহিরপুরঃ সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় শ্বশুর বাড়ির যৌতুকের দাবি মেটাতে না পারায় মাইফুল নেছা(২৩) নামের এক গৃহবধূকে হাত পা ও মুখ স্কচ লাগিয়ে বাড়ির পার্শ্ববর্তী নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন স্বামী, শ্বশুর ও দুই দেবর। এ ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল (৩০ জুলাই) শুক্রবার রাতে উপজেলার উত্তর বাদাঘাট ইউনিয়নের বাদলারপাড় গ্রামে। পরে এ ঘটনা ওই গৃহবধূর বাড়ির পাশের আশপাশের প্রতিবেশীরা দেখে ফেলায় ওই গৃহবধূকে নদীর পাড়ে ফেলে রেখে পালিয়ে গেলে হাত-পা ও মুখে স্কচ বাঁধা অবস্থায় ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করেন।
এদিকে ওই গৃহবধূর নির্যাতনের ঘটনা জানতে পেরে পেয়ে প্রতিবেশী মো. সুমন আহমেদ সরকারি জাতীয় সেবা নাম্বার ৯৯৯ কল করার পর বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ির এ এস আই মো. শহিদুল ইসলাম এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ওই গৃহবধূকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান।
পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আট মাস আগে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার চৌধুরীপাড়া গ্রামের সাজিদুলের ছেলে আবু তাহের জান্নাত (২৮) সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের বাদলার পাড় গ্রামের কারী নিজাম উদ্দিনের মেয়ে মাইফুল নেছার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী আবু তাহের জান্নাত পার্শ্ববর্তী ভোলাখালি গ্রামের এক ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে সাথে নিয়ে সংসার শুরু করে। পরে ওই গ্রামেই আবু তাহের জান্নাতের দুই সহোদর জাকির(২৫) ও বাবুল(২২) এবং তার বাবা এসে ওই গ্রামেই পোল্ট্রি মোরগের ব্যবসা শুরু করেন।
বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামী আবু তাহের জান্নাত যৌতুক দাবি করলে কয়েক ধাপে যৌতুকের ৫০ হাজার টাকা পূরণ করেন হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন। গৃহবধূহ মাইফুল নেছার পরিবারের লোকজন জামাই বাড়ির চাহিদা মতো যৌতুকের ৫০ হাজার টাকা মেয়ের সুখের জন্য দেয়ার পর আবারও গৃহবধূ মাইফুল নেছাকে গত মাস খানেক ধরে যৌতুকের আরও ৫০ হাজার টাকার জন্য চাপ দেয় তার স্বামী ও স্বামীর পরিবারের লোকজন। কিন্তু টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে গৃহবধূ মাইফুল নেছার উপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন। প্রতিদিনই চলে নির্যাতন । সেই নির্যাতন সইতে না পেরে অবশেষে মাইফুল নেছা তার বাবার বাড়িতে চলে আসেন।বাবার বাড়িতে আসার পর গতকাল (৩০ জুলাই) শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাইফুল নেছা প্রকৃতির ডাক দিলে ঘরের বাইরে গেলে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা তার স্বামী আবু তাহের জান্নাত, তার দুই দেবার ও শ্বশুর মিলে মাইফুল নেছাকে জোর করে তোলে নিয়ে গিয়ে গৃহবধূ মাইফুল নেছার হাত পা ও মুখে স্কচ বেঁধে সড়কের পাশে ভাঙ্গার খাল নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া চেষ্টা করে। এ সময় প্রতিবেশীরা ঘটনাটি টের পেয়ে নদীর পাড়ে এগিয়ে আসলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে প্রতিবেশী কয়েকজন যুবক মাইফুল নেছাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বর্তমানে চিকিৎসার জন্য তাকে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়েছে।
মাইফুল নেছার ছোট ভাই মো. এবায়দুল্লাহ(২০) বলেন, বিয়ের পর থেকেই তারা আমার বোনকে নির্যাতন করছিল। যৌতুকের ৫০ হাজার টাকার দাবি মেটানোর পরও নির্যাতন বন্ধ করেনি। আজ তারা হাত পা বেঁধে আমার বোনকে নদীতে ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিল।
অভিযুক্ত আবু তাহের জান্নাতের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।
তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এবং ওই গৃহবধূকে রাতেই চিকিৎসার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে । গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কমেন্ট করুন