বিশেষ প্রতিনিধি ঃ ছাতক-সুনামগঞ্জ রেলপথের সম্ভাব্যতা যাচাই চূড়ান্ত পর্যায়ে। রেলপথের প্রথম কিলোমিটার অর্থাৎ সুনামগঞ্জ স্টেশনের শেষ সীমানা আরও ৪০০ মিটার দক্ষিণে করার দাবি জানিয়েছেন নতুনপাড়াবাসী। মহল্লাবাসীর দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্ত। শনিবার রেলওয়ের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মজুমদার এন্টারপ্রাইজের সমীক্ষা দলকে শেষ সীমানায় সম্ভাব্যতা যাচাই করতেও দেন নি দক্ষিণ নতুনপাড়াবাসী। তাদের দাবি মহল্লার ব্যক্তিগত অনেক বহুতল ভবন রক্ষা পাবে ৪০০ মিটার দক্ষিণে স্টেশন সরিয়ে নিলে, ওখানে সরকারি জমিও আছে।
প্রায় ৬৬ বছরেরও আগে (১৯৫৪ সালে) সুনামগঞ্জের থানা শহর ছাতক পর্যন্ত রেললাইন এসেছে। কিন্তু সুনামগঞ্জ জেলা শহর এখনো যুক্ত হয় নি রেল লাইনের সঙ্গে। সুনামগঞ্জের উৎপাদিত ধান, সবজি, মাছ, পাথর কম পরিবহন খরচে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য রেলপথের দাবি বহুদিনের। জেলাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে রেলওয়ে। রেলপথের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য নিয়োগকৃত মজুমদার এন্টারপ্রাইজের সমীক্ষা দল ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ শহরের দক্ষিণ নতুনপাড়া পর্যন্ত সমীক্ষা করেছে। সমীক্ষাকালে গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত ৫ টি স্টেশন নির্ধারণ করা হয়েছে। শেষ স্টেশন হবে দক্ষিণ নতুনপাড়া পাশর্^বর্তী ঝাওয়ার হাওরে। এই স্টেশনটির দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার এবং প্রস্ত হবে ৫০০ মিটার। এই স্টেশন অর্থাৎ রেল লাইনের ০ কিলোমিটারে ১২০ টির মত বহুতল ভবনসহ পুরোনো অনেক ব্যক্তিগত স্থাপনা রয়েছে। এজন্য স্থানীয় বাসিন্দারা শনিবার সমীক্ষা দলকে তাদের এলাকায় সমীক্ষা করতে দেন নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি দক্ষিণ দিকে ৪০০ মিটার সরলেই সরকারি জমিও আছে। কোন স্থাপনাও নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আলী আমজাদ প্রধানমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী ও রেলমন্ত্রী’র প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললেন, রেলপথ আসছে বাড়ির পাশে, আমরা আনন্দিত। আমরা সহযোগিতা করতে চাই। যেহেতু দক্ষিণ দিকে সরালে সরকারের অর্থ সাশ্রয় হয়, মহল্লাবাসীর দীর্ঘদিনের বসতিও ঠিক থাকে, ব্যক্তিগত বহুতল ভবনগুলো রক্ষা পায়, সেহেতু কেন সেটি সরানো হবে না, নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষ এটি বিবেচনা করবেন, আমরা এজন্য বাড়ি-ঘরে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বাধা দিয়েছি।
নতুনপাড়ার বাসিন্দা আওয়ামী লীগ নেতা বিকাশ কান্তি দে বাবুল বললেন, রেলওয়ের সমীক্ষা দলকে আমরা সহযোগিতা করেছি, তারাও মহল্লাবাসীর দাবির বিষয়টিকে যৌক্তিক মনে করছেন, তিন থেকে চারশ’ মিটার দক্ষিণ দিকে সরালে সবকিছু রক্ষা হয়। দীর্ঘদিনের আবাসিক এলাকা রক্ষা পায়। একই ধরণের মন্তব্য করলেন স্থানীয় বাসিন্দা প্রকৌশলী কালী কৃষ্ণ পাল, তফু মিয়া, কনক তালুকদার, পিযুষ কর ও আজিজুর রহমান।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করলেন, পৌর মেয়র নাদের বখ্তও। তিনি বললেন, শহরের পুরোনো বসতি দক্ষিণ নতুনপাড়া, ওখানকার বাসিন্দারাসহ পৌরবাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। স্টেশনটি দক্ষিণ দিকে তিন-চারশ মিটার সরালে অনেক বহুতল বাড়ি ও স্থাপনা, শত শত মানুষের পুরোনো ভিটে রক্ষা পায়। কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।
মজুমদার এন্টার প্রাইজের সমীক্ষাকারী দলের প্রধান মোহাম্মদ শাহীন আহমেদ বললেন, আমরা গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত পর্যন্ত ৪৫. ৯ কিলোমিটার সমীক্ষা করেছি। এই পথে সম্ভাব্য স্টেশন নির্ধারণ হয়েছে সুনামগঞ্জ শহরের দক্ষিণ নতুনপাড়ার শেষ প্রান্তে, শান্তিগঞ্জে, গোবিন্দগঞ্জে, দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়ন পরিষদের পাশে এবং কৈতক হাসপাতালের পাশে। সমীক্ষাকালে বাড়ি ও স্থাপনা রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে পুরো পথেই। এরপরও ৩৩০ টির মতো বাড়ি পথে বা স্টেশনে পড়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি জিরো কিলোমিটার অর্থাৎ সুনামগঞ্জ সদরের দক্ষিণ নতুনপাড়ায় বাড়ি-ঘর পড়েছে। দক্ষিণ নতুনপাড়ার বাসিন্দারা সমীক্ষা না করার দাবি জানিয়ে বলেছেন, দক্ষিণ দিকে তিন-চারশ’ কিলোমিটার সরে স্টেশনের সীমানা চিহিৃত করার জন্য। আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। তারা সিদ্ধান্ত দিলেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
এই সমীক্ষা কর্মকর্তা জানান, শান্তিগঞ্জ থেকে জামালগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণের প্রাথমিক কাজও চলমান রয়েছে।
কমেন্ট করুন