তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধি
সারিবদ্ধভাবে বাগানের গাছের ডালে ডালে মধু খেতে আসছে বুলবুলি, কাঠশালিক, হলদে পাখিরা। পাখির কিচির মিচির ডাক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বাগানে। থেকে থেকে ফোটা ফুল মাটিতে পড়ছে, আবার থপ থপ করে একটা শব্দও হচ্ছে। ঝরে পড়া শিমুল ফুলে মালা গেথে বিক্রি করছে একদল পথশিশু,এক বৃদ্বা ফুল গুলো সাজাচ্ছে ভালোবাসার চিহ্ন দিয়ে,
আগতরা লাভ চিহ্ন বেষ্ঠনীর ভিতরে ছবি তোলে দিচ্ছেন নাম মাত্র ৫/১০ টাকা। কেউ কেউ ফুলের মালা খোপায় পড়ে প্রেমিকে হাত ধরে এক’শ বিঘা জমির দীর্ঘ সারির ফুলবনে হেটে হেটে গাইছে কবির বকুলের সেই প্রিয়গান-
”আজ রঙে রঙে রঙিন হবো,
রঙের হাওয়ায় ভেসে যাব
রঙের দুনিয়ায়,
ভালোবাসায় দুটি প্রানে, রঙ ছড়াব স্বপ্ন গানে,
রঙের ছোয়ায় হারিয়ে যাব
শুধু দু’জনায়।
সত্যিই তাই সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শিমুল বাগানে আজ মিলিত হয়েছে ভালোবাসার মানুষগুলো ,মা,বাবা ভাই বোন ,বিভিন্ন স্কুল,কলেজ ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থী সহ পরিবার পরিজন নিয়ে যে যার মত করে দিনটিকে উপভোগ্য করে তোলেছে আজ।
ঢাকা থেকে আসা ফারিয়া আক্তার তার বয়ফ্রেন্ড শাওনকে নিয়ে শিমুলবনে ভালোবাসা দিবসকে স্বরণীয় করে রাখতে সুনামগঞ্জের তার ভালোবাসার মানুষ শাওনকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। এখানে এসে তিনি খুবই আনন্দিত। নেচে গেয় হহৈল্লুর করে কাটাচ্ছেন সময়।
পার্শ্ববর্তী বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘুরতে এসেছেন শিমুলবনে। শিমুল বনের চারিদিক নিরিবিলি ও সুশৃংখল পরিবেশ,ঘোড়ায় চড়ে সিমান্ত ঘেঁষা নদী পাহাড় দেখে খুবই মুগ্ধ। গান,কবিতা আবৃতি,খেলাধুলা কের সময় কাটাচ্ছেন তারা।
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ থেকে স্বামী-স্ত্রী এসেছেন তাদের একমাত্র কন্যাকে শিমুলের ফুল দিয়ে সাজাবে বলে।মেয়ের ইচ্ছে পুরন হওয়ায় খুবই আনন্দিত তারা।
সুনামগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা জেলা প্রেসক্লাব সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু বলেন,এখানকার পরিবেশ অত্যান্ত র্নিমল। একদিকে যাদুকাটা নদী,মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ,বারেকের টিলা সৌন্দর্যে মিলেমিশে পরিপুর্ন শিমুল বন।
শিমুল বনের প্রতিষ্ঠাতা হাজী জয়নাল আবেদীনের ছেলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রাখাব উদ্দিন বলেন এখানকার লোকজন কিংবা প্রকৃতি প্রেমিরা তাদের জন্মদিন,বিবাহ বার্ষিকী,অথবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও এখন শিমুল বাগানে করে।
রাখাব উদ্দিন বলেন,আমার বাবা বাদাঘাট (উত্তর) ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন ১৯৯৮ সালে নিজের প্রায় ২ হাজার ৪০০ শতক জমি বেছে নিলেন শিমুল গাছ লাগাবেন বলে। সে জমিতে তিনি প্রায় তিন হাজার শিমুল গাছ লাগালেন। দিনে দিনে বেড়ে ওঠা শিমুল গাছগুলো রুপ নিয়েছে আজ শিমুল বনে। সেই সঙ্গে শিমুল বাগানের কাছাকাছি টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ লেক, ট্যাকেরঘাট খনি প্রকল্প, বড়গোফটিলা, যাদুকাটা নদীটি ও মেঘালয় পাহাড় সহজে দেখার সুযোগ পাবে পর্যটকরা। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় সারা সারা বছরই লোক সমাগম লেগেই থাকে পর্যটন সমৃদ্ধ তাহিরপুর শিমুলবনে।
ভবিষ্যতে পর্যটকদের উপযোগী একটি রিসোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনাও যাদুকাটা নদীর তিন মোহনায় একটি সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের চেষ্টা করবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান তিনি।
শিমুল বনে ক্যান্টিনের মালিক হুমায়ুন কবির বলেন অন্যন্য বছরের তুলনায় এ বছর দৃষ্টিনন্দন হয়েছে শিমুলবন। পর্যটন প্রেমিদের উপস্থিতিও বেড়েছে ।তার কারন হলো লোকজন পিকনিক,কিংবা যেকোন সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্টান করতে চান এখানে সুশৃংখল পরিবেশও খাবার মান উন্নত হওয়ায় বছরের যেকোন সময়ইে আগাম অর্ডার করে চলে আসেন। তাছাড়া এলাকার লোকজন অথিতি পরায়ন বলেই দিনদিন শিমুল বনে লোকজনের উপস্থিতি বেড়েই চলেছে।
যেভাবে আসবেন শিমুলবনে ঢাকা সায়েদাবাদ,ফকিরাপুল,কল্যানপুর হতে প্রতিরাতে ছেড়ে আসা এনা হানিফ,মামুন,শ্যামলী,ইউনিক,আল মোবারাকা গাড়ি দিয়ে ৬’শ থেকে ৮’শ পঞ্চাশ টাকা টাকায় নন এসি গাড়ি দিয়ে সুনামগঞ্জ আব্দু জহুর সেতুতে নেমে প্রতি সি এনজি ৬’শটাকা অথবা দ,জনে মিলে একটি বাইক ৩’শ টাকায় সোজা চলে আসবেন যাদুকাটা নদীর পাড়। যাদুকা নদী পাড় হয়েই পৌছে যাবেন শিমুল বাগানে। খাবারের ম্যানু নির্বাচন করে ০১৭১১-৬২১২৭৪ (হুমায়ুন) অর্ডার করতে পারেন এই নাম্বারে। শতভাগ সেবার নিশ্চয়তা পাবেন আপনি।
কমেন্ট করুন