১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

সংবাদ শিরোনামঃ
সুনামগঞ্জে  কৃষি ঋণ মেলা ও প্রকাশ্যে কৃষি ঋণ বিতরণ  অনুষ্ঠিত। তাহিরপুর উপজেলার বৃহৎ বাদাঘাট বাজার বণিক সমিতির নির্বাচন সম্পন্ন তাহিরপুরে ইউএনও’র পদক্ষেপে ৫টি হাওর জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পেলো সুনামগঞ্জের হাওরে নতুন বছরের স্বপ্ন: পরিষ্কার নদী,পরিচ্ছন্ন আকাশ ও নবায়নযোগ্য শক্তি” শীর্ষক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত বুনিয়াদি প্রশিক্ষণার্থীদের সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় পরিদর্শন তাহিরপুর চোরাচালানের গডফাদার রফ মিয়া আটক সুনামগঞ্জে এক যুবক গুলিবিদ্ধের ঘটনায় পৌরসভার মেয়রসহ ৫জনের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ বিশ্বম্ভরপুরে মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভা অনুষ্টিত বিশ্বম্ভরপুর এফআইভিডিবি’র বিএইচএ প্রকল্পের অবহিতকরণ সভা সুনামগঞ্জে জনতা ব্যাংকের এটিএম বুথ উদ্বোধন সুনামগঞ্জ বিজিবির অভিযানে দেড় কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য আটক সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ নিয়ে অনৈতিক অভিযোগের কারণে  স্থগিত পিআইসি গঠন কার্যক্রম।  বিশ্বম্ভরপুরে উপজেলা যুব ফোরামের র‍্যালী ও মানববন্ধন বিশ্বম্ভরপুরে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিশ্বম্ভরপুরে আন্তর্জাতিক দূর্নীতি বিরোধী দিবস ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশ্বম্ভরপুরে জলবায়ু পরিবর্তন ও জেন্ডার বিষয়ক প্রশিক্ষণ সুনামগঞ্জে গানে গানে বাউল কামালের ১২৩ তম জন্মবার্ষিকী পালিত আগ্নেয়াস্ত্র সহ তাহিরপুর সীমান্তে ৩ যুবক আটক
সোনালী অতীত- পর্ব-২

সোনালী অতীত- পর্ব-২

শাহ জাহান আহমেদ,মাল্টা থেকেঃ-“আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়ির তীরে-এই বাংলায়

হয়তো মানুষ নয়-হয়তো বা শঙ্খচিল
শালিখের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে
এই কার্তিকের নবান্নের দেশ।
(জীবনানন্দ দাশ)

শীতকালে যদি আমদের এলাকায় নতুন কোন অতিথি আসেন তবে রাতে বাতাসের শনশন শব্দকে মনে করতে হবে নির্ঘাত তুফান আসছে।

যাদুকাটা নদী নিয়ে খুব একটা লেখার দরকার নাই, ইদানীং কালে প্রচুর লেখা ও ছবি ফেইসবুকে পোষ্ট করা হইতেছে। আমি আমার ছোটবেলার কথা বলতেছি বৈশাখ মাস ছিল মাছের প্রজননের সময়। সেই সময় নদীতে পাহাড়ি ঢলে নতুন পানি আসে, মাছের(স্হানীয় ভাষায় উজ্জিয়া বলে)প্রজনন শুরুর সময়। ঐ সময় নদীতে ডুব দিলে কটকট ও বিভিন্ন শব্দ শুনতে পেত মানুষ। ঐ সময়টায় মাছ ধরার জন্য অপেক্ষায় থাকে স্থানীয় মানুষ,কখন সেই সময়টা আসে।ঐ প্রজননের সময় মাছ ধরার ফলে মহাশোল নানীধ, খারাই,দেড়ওয়া কলা মুছুরী,লবন চূরা,চিরাইল,বাঘাইর,পুঁটি মাছ,লাছ মাছও মনর মাছ যাদুকাটা নদী থেকে বিলুপ্ত ।
দ্বিতীয় কারন অপরিকল্পিত বালু পাথর উত্তোলন , প্রচুর ডিজেল চালিত নৌকা শব্দ ইঞ্জিনের ঘূর্ণন ফলে মাছ চলাচলে পথ বন্ধ করে দেওয়া,তেল মোবিল পানিতে ফেলাও আর একটা কারন।বেশ কিছু বছরধরে হলদিয়া নদীর কথা পত্রিকায় আসছে,মাছের পোনা সংগ্রহের ব্যপারে। আমাদের নদী সেই রকমের। কিছু মাছ আছে বালু নদী ছাড়া ডিম পারেনা। এছাড়া আন্তর্জাতিক ব্যাপারও আছে।

মেঘালয়ের রানীকরের উপরে ইউরোনিয়াম এর খনি আছে। বিশ/পঁচিশ বছর আগে ভারতীয় সরকার ঐ খনি থেকে নিয়মিত ইউরোনিয়াম উত্তোলন করত। সারা শীতকাল বৃষ্টি না হওয়ায় ফলে,প্রথম পাহাড়ী ঢলে ইউরোনিয়াম এর বর্জ্য ধুয়ে মুছে নদীতে চলে আসে।ঐপানিতে মাছ পাগলের মত ছোটাছুটি করে জালে ধরাপরে ও আবার অনেক মরামাছ নদীতে ভেসেও আসত।এখানে বলে রাখা ভাল বৈশাখ জৈষ্ঠ মাসে মাছ পাহাড়ের নদী থেকে নিচে চলে আসে বড় নদীতে এবং ভাদ্র আশ্বিন মাসে উজানে চলে যায় প্রকৃতির নিয়মে।

যাদুকাটা নদীর বিভিন্ন নাম আছে, যেমন রেণুকা, পনাতীর্থ, গারো নাম পাটলী ও খাসিয়া নাম ক্যানসী। এই ক্যানসী নামটা গুগল ম্যাপে অন্তর্ভূক্ত ।আমি কয়েক বার মেইল দিছি বাংলাদেশ অংশের নাম বদলানোর জন্য। সবারই চেষ্টা করা উচিত।

আমি মাছ ধরার বিলুপ্ত পদ্ধতির কথা তোলে ধরার চেষ্টা করব। বালি নদী হওয়ার ফলে দ্রুত নদীর মধ্যে চরা পরে , ফলে চেলা মাছের ঝাক উজানে যাওয়ার জন্য কম পানিত চলে আসে, ঐ সময় মহিলারা শাড়ির দুই মাথায় দুইজন ধরে পুরো ঝাঁক ধরতে সক্ষম হয়। আবার পাতনী পেতে ছোট কলসির ভিতর চালের কূরা দিয়ে চেলা মাছ ধরা হত। নদী মধ্যে খুঁটি দিয়ে তাতে পাতার ঝাঁপ বেধে দিত, তাতে রাতে ঠেলা ঝালি দিয়ে মাছ ধরত। আবার সরকার থেকে লীজ এনে নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরত। বেল জালের মাধ্যমে চৈত্র /বৈশাখ মাসে বড় বন্যা না হওয়া পযন্ত মাছ ধরা যায়।আসলে মাছ ধরার পদ্ধতি ছিল বিচিত্র।নদীর মধ্যে পাথরের স্তূপ কে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ঝরঝরিয়া। এর মধ্যে মাছ ছিল,আমরা ছোট বেলা পাটকাটির মাথায় ছাতার ঢাসা লাগিয়ে তীরের মত বানিয়ে রানী ,ইছা ও বালিয়ারা মাছ শিকার করেছি। কম পানিতে পটকা মাছ হাতে ধরা যেত,আবার কুচা দিয়ে প্রচুর মরেছি , কিন্তু সে গুলি বিষাক্ত ছিলনা।শীতে নদীর পানি প্রচন্ড ঠান্ডা, আমরা গোসলের সময় পানি তে ডুব দিয়ে এসে শরীরে বালু দিয়ে ঢেকে দিতাম গরমের জন্য ।এটি ছিল মজার খেলা।কাইলা মাছ অথ্যাৎ কালাবাউশ হল এই নদীর বিখ্যাত মাছ, এই নদীর কালাবাউশের চেয়ে কোন মজার মাছ আছে আমার জানা নেই। ভাদ্র মাসে মাছ মারা পরত বেশী, সন্ধ্যার সময় গ্রামে রাস্তা দিয়ে হাঁটলে মাছের তেল বাজার গন্ধ বুঝা যেত মাছ ভাজতেছে। আরেকটা খাবার ছিল আস্ত কালাবাউশ মাছের সাথে ইছা শাক ও চালের গুঁড়া দিয়ে শাকবেড়বেড়ি, আহ! কি স্বাদ ছিল। ফুটি মাছ ও লাছ মাছ সিদ্ধ কোন মসলা ছারা ,শুধু লবন দিয়ে। এ গুলো ছিল ঐতিহ্যবাহী খাবার, যা অন্য এলাকায় নাই।আমাদের নদীর মাছে আসটে গন্ধ কম। আমাদের আরও দুটি ঐতিহ্যবাহী খাবার ছিল লোট ও মোরগের কাবাব একটু ভিন্ন স্টাইলের ।মোরগকে আগূনে ঝলসানোর পর আদা ,পিয়াজ, কাচা মরিচ ও ঘি সহযোগে গাইলের মধ্যে কুটে পরিবেশন করা হয় সাথে লুট। লুট তৈরি হত চালের গুরা ও আদা, রসূন ও পেঁয়াজ দিয়ে আগুনে দিয়ে ঝলসিয়ে সবাই দল বেধে উৎসব করে।অনেক পরে অবশ্য খাসিয়া পদ্ধতিতে মোরগের কাবাব বানাইছি, তা ছিল ভিন্ন পদ্ধতি । আমি আন্দ্রিয়দা তার ঐতিহ্যবাহী বাংলা ঘরে সাথে আমরা সন্ধ্যায় শুরু করতাম, প্রথমে সিদ্ধ কিছু নর্মাল মশলা সহ। সেদ্ধ এর পরে মাংসের সাথে আদা,পেঁয়াজ, কাঁচা মরিছ ও ঘি। সেদ্ধ পানিটা সুপ হত চমৎকার, নিরব রাত্রি ঠান্ডা আবহাওয়া ও আস্তে আলাপের সাথে খাওয়া চলত । কত রাত্রি যে আড্ডা মেরছি তার শেষ নাই। সেই সোনালী দিন গুলো কি মজাই না ছিল।

ক্রমশ——–:

শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন





পুরাতন খবর খুঁজুন

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭