শাল্লা প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ৮১নং পিআইসির বাধ ভেঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে সুবিশাল হাওর। কড়া তদারকি ও নজরদারীর মধ্যেও রাতে ওই বাধে লিকেজ হয়ে রবিবার ২৪এপ্রিল ভোরে বাধটি ভেঙ্গে যায়। আর বাধটি ভাঙ্গার পেছেনে পিআইসির লোকজনের গাফিলতিকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। তবে পিআইসির সভাপতি বরাবর এ অভিযোগ অস্বীকার করছেন।
গত চৈত্র মাসের মাঝামাঝিতে পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নদনদীর পানি বাড়লে উপজেলা প্রশাসন, পওর বিভাগ, সংশ্লিষ্ট পিআইসির লোকজন ও এলাকাবাসি দিনরাত কাজ করে সবগুলো বাধ অক্ষত রাখলেও নদীর পানি কিছুটা কমে গেলে ও আবহাওয়া অনুকূল আসায় বাধের উপর জনতৎপরতা কিছুটা হ্রাস পায়। কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ধান কাটায়। কৃষকেরা বাধ ছেড়ে দিলেও উপজেলা প্রশাসন থেমে থাকেননি। প্রতিটি বাধেই প্রশাসনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
এরইমধ্যে গত শনিবার রাতে অতর্কিতে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হলে ও প্রচন্ড বজ্রপাতের কারনে ৮১নং পিআইসির লোকজন চলে আসায় রাতেই এমন দুরঘটনা সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারনা করছেন অনেকেই।
বাধটি ভাঙ্গার সাথে সাথে উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়েও স্রোতের প্রকোপে ভাঙ্গন দ্রুত বাড়তে থাকায় কোনো প্রতিকারে হাত দিতে পারেননি তারা।
জানা যায়, উপজেলার ছায়ার হাওরে এ বছর শাল্লা অংশে ৪হাজার ৬শ ৩৭হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। তাছাড়া কিশোরগঞ্জের ইটনা অংশে ও নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি অংশে প্রায় হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়।
শাল্লা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর ও ইউএনও অফিস সূত্রে জানা যায়, এপর্যন্ত ছায়ার হওরে ৯৫শতাংশ জমির ফসল কাটা হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের অভিমত ভিন্ন। তারা বলছেন এখনো ছায়ার হাওরে ১৫শতাংশের উপরে ফসল রয়েছে। তারা এও বলছেন, পানিতে হাওর তলিয়ে যেতে দু একদিন সময় লাগবে, এরই মধ্যে আরো কিছু ফসল কাটা সম্ভব হতে পারে।
ছায়ার হাওরপাড়ের সুলতানপুর গ্রামের কৃষক তকবির হোসেন বলেন, আমার প্রায় ৩০% জমি আনাকাটা রয়েছে। লোকবলের অভাবে ধান কাটতে কিছুটা দেরী হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমার দেখা মতে ছায়ার হওরে প্রায় ১০শতাংশ জমির ফসল এখনো রয়েছে। ওই হাওরের মুক্তারপুর গ্রামের কৃষক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিধান চন্দ্র চৌধুরী জানান এখনো ছায়ার হাওরে প্রায় ২৫শতাংশ ফসল রয়ে গেছে। ৪নং শাল্লা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুস সাত্তার মিয়া জানান, হাওরে এখনো ছয় আনা জমির ফসল কাটা হয়নি। অপরদিকে খালিয়াজুড়ির কৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শামীম মোড়লের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেল, আমার ইউনিয়ন এলাকায় এখনো ২০% ফসল রয়েছে। তবে আশা করছি, আজ কালের মধ্যে ধান কাটা শেষ করতে পারবো।
এবিষয়ে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু তালেবের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পানি আসার সাথে সাথেই আমরা সাধারন কৃষকগনকে সঙ্গে নিয়ে আপ্রান চেষ্টা করে এতোদিন বাধ অক্ষত রাখতে পেরেছি। কিন্তু গত রাতে প্রবল কালবৈশাখী ঝড়ের কারনে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। তবে বাধের অক্ষত স্থানে কি ভাবে ভেঙ্গে গেলো বুঝে উঠতে পারছি না। এস্থানে বাধ ভাঙ্গার কথা নয়। মূল ক্লোজার এখনো অক্ষত রয়েছে।
এরইমধ্যে ছায়ার হাওরের ৯৫শতাংশ জমির ফসল কাটা হয়েছে মর্মে নিশ্চিত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু তালেব।
কমেন্ট করুন