ডেস্ক রিপোর্টঃ মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন।এ ইউনিয়নের পুটিয়াজানী দুই শতাধিক ছোট-বড় পরিবারের বাস। গ্রামের অধিকাংশ মানুষই কৃষিজীবী। কেউ কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। কিছু মানুষ কায়িক শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
গ্রামবাসীর মনে একটি দুঃখ ছিল, এ গ্রামের কেউ মারা গেলে মৃতদেহ কবর দেওয়ার মতো ছিল না নিজস্ব কোনো কবরস্থান। এই গ্রামের কেউ মারা গেলে পার্শ্ববর্তী অন্য এলাকার কবরস্থানে দাফন করা হতো। শিক্ষা, যোগাযোগসহ বিভিন্ন দিক থেকে গ্রামটি ছিল বরাবরই অবহেলিত। ১১ জন হিতৈষী উদ্যোক্তার চেষ্টায় বদলে গেছে গ্রামটি। উন্নয়ন আর মানবিক কর্মকাণ্ডের ছোঁয়ার গ্রামটি এখন পরিণত হয়েছে শান্তির নীড়ে।
গ্রামটিতে এখন হয়েছে রাস্তাঘাট, বৃহৎ দৃষ্টিনন্দন কবরস্থান ও লাশ রাখার ঘড় নির্মাণ, বিদ্যুতায়ন, দরিদ্রদের সহায়তা, শিক্ষা উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামের সাধারণ মানুষ জনের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় রীতিমতো রোল মডেলে পরিণত হয়েছে পুটিয়াজানী গ্রামটি। আশপাশের গ্রামেও এই গ্রামের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।
‘গ্রাম উন্নয়ন কমিটি’ নামে ১১ জনের একটি কমিটির নেতৃত্বে শুরু হয় গ্রাম উন্নয়ন যাত্রা। গ্রামবাসীর মধ্যে বিবাদমান সমস্যাগুলো নিজেরাই বসে আলোচনা সাপেক্ষে সুষ্ঠু সমাধান করছেন। কমিটির উদ্যোগে সংস্করণ করা হয়েছে মসজিদ। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। গ্রামবাসীর বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের জন্য কেনা হয়েছে ডেকোরেশন উপকরণ। দরিদ্র-অসহায়দের জন্য সরকারী দফতরের বিভিন্ন অনুদান ব্যবস্থা চালু করেন তারা। জমি সংক্রান্ত বহু সমস্যার সমাধানে গ্রামবাসীর মাঝে বিরাজ করছে আনন্দ। নানা কল্যাণমুখী কর্মসূচি গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রাকে বদলে দিয়েছে। এখন একটি ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্র ও ঈদগাঁ মাঠ তৈরির করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তারা।
গ্রামের আন্তাজ মোল্লা, ছত্তার মোল্লা ও আছিয়া বেগম বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমাদের শরীকি জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। মামলা-মকদ্দমা করে সবাই নাজেহাল হওয়ার পাশাপাশি অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অবশেষে কমিটির লোকজন গ্রামের মানুষজন নিয়ে কয়েক দফা বসে সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন। আমরা সবাই এখন শান্তিতে যার যার জায়গার উপর বসবাস করছে কোন সমস্যা নেই।
রামজান খান বলেন, আমি দরিদ্র মানুষ। রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। আমার সন্তানদের পড়াশোনা করানো কষ্টকর ব্যাপার ছিল। তখন কমিটির লোকজন আমার ছেলের লেখাপড়ার জন্য সহায়তা করার ফলে ছেলের লেখাপড়া চলমান রয়েছে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
কমিটির সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গ্রামে কোনো সমস্যা হলে সবাই মিলে বসে সেটা সমাধান করা হয়। কারো কোনো অভিযোগ নেই। দলাদলি নেই। সবাই গ্রামের ভালো চায়। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি ও সহযোগিতা পেলে গ্রামের সকল সমস্যার সমাধান করতে পারবো।
স্থানীয় বালিয়াখোড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান বলেন, আশে পাশের গ্রামের মানুষজনের কাছে পুটিয়াজানী আদর্শ। গ্রামবাসী নিজেরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান করেন। বিষয়টি খুবই ভালো লাগে আমার কাছে।
ঘিওর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, পুটিয়াজানী গ্রাম একটি আদর্শ গ্রাম। গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে যে কোন উন্নয়ন করতে বদলে ফেলতে পারে গ্রামের চিত্র। পুটিয়াজানী তেমনই এক উদাহরণ।
কমেন্ট করুন